ঢাকা , রবিবার, ১৮ মে ২০২৫ , ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

আপলোড সময় : ১৭-০৫-২০২৫ ১১:৪৪:৪৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৭-০৫-২০২৫ ১১:৪৪:৪৮ অপরাহ্ন
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে ভারতের নিষেধাজ্ঞা
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় স্থলবন্দরগুলো দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে তৈরি পোশাকসহ একাধিক পণ্যের রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ‘ল্যান্ডলকড’ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে দিল্লি এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে। 

শনিবার (১৭ মে) বার্তাসংস্থা এএনআই নিউজ এ খবর জানিয়েছে। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

চীনের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তৃতায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ‘সমুদ্রবন্দরবিহীন (ল্যান্ডলকড)’ অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করেন। ভারত এই মন্তব্যকে অপমানজনক বলে মনে করছে। দেশটির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মহল মনে করছে, এতে তাদের আঞ্চলিক যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত অগ্রগতিকে হেয় করা হয়েছে।

ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে শুধু নহাভা শেভা এবং কলকাতা সমুদ্র বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আনা যাবে। তবে ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে যেসব পণ্য রপ্তানি করা হবে সেগুলোর ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কিছু নির্দিষ্ট পণ্য ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে আসায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের কোনো শুল্ক পয়েন্টে— পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা এবং ফুলবাড়ি শুল্ক পয়েন্ট দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কার্বনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, তুলার বর্জ্য, প্লাস্টিকের পণ্য (পণ্য তৈরির জন্য নির্দিষ্ট উপকরণ ব্যতীত) এবং কাঠের আসবাবপত্র আমদানি করা যাবে না।তবে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল এবং চূর্ণ পাথরের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।

এএনআই জানিয়েছে, কলকাতা এবং মহারাষ্ট্রের নেহভা শেভা বন্দর দিয়ে যেহেতু এখন শুধু বাংলাদেশ এসব পণ্য আনতে পারবে এতে বাংলাদেশের এসব পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়বে।

ভারতের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ একতরফাভাবে ভারতের বাজারে প্রবেশাধিকার পেলেও ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে একই ধরনের সুবিধা দেয়নি। ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতেই এই সিদ্ধান্ত। পারস্পরিকতার ভিত্তিতে চলতে হবে, নাহলে একতরফা ছাড় আর নয়।

ভারত আরও অভিযোগ করেছে, ট্রানজিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতি কিলোমিটারে টনপ্রতি ১.৮ টাকা ফি নিচ্ছে, যেখানে দেশের অভ্যন্তরীণ হার টনপ্রতি ০.৮ টাকা। এতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিল্প খাত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও দাবি করেছে তারা।

এদিকে, ভারতের এমন হটকারী সিদ্ধান্ত স্বভাবতই দুই দেশের মাঝে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কিছুটা হলেও আরও অবনতি করবে বলে মনে করছেন রফতানিকারকরা। এ বিষয়ে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সময়ের আলোকে বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য যখন বিভিন্ন সমস্যাই জর্জরিত ঠিক তখন ভারতের এধরণের সিদ্ধান্ত বাণিজ্যিক সংকটের মাত্রা উভয়েরই আরও বাড়াবে। বাংলাদেশী পোশাক এখন যেতে আগের থেকে আরও বেশি সময় লাগবে, খরচ বাড়বে। এছাড়া এক্সপোর্টও কমবে বাংলাদেশের। 

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সময়ের আলোকে বলেন, ভারতে বাংলাদেশ গড়ে বৎসরে অর্ধ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এক্সপোর্ট করে থাকে। যেহেতু ভারত বাংলাদেশের একটি বড়ো ক্রেতা এবং তৈরী পোশাক এক্সপোর্ট বাড়তির দিকে ছিল, সেহেতু এইটা একটু হলেও আমাদের নতুন চিন্তার কারণ হলো। যদিও ভুটান বা নেপালের ট্রানশিপমেন্ট এটাতে এফেক্টেড হবে না বলে জানা গেছে তবু ও সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়িক সম্পর্কে এফেক্টে ফেলবে। যেহেতু তৈরী পোশাক ছাড়াও আরও পণ্য যেমন ফল, কার্বোনেটেড ড্রিংক, প্লাষ্টিক এবং পিভিসি ফিনিশড মালামাল এবং উডেন ফার্নিচার ভারতের উত্তর-পূর্ব স্থলবন্দরগুলিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, সুতরাং সামগ্রিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং আর্থিক ক্ষতির ও আশংকা থেকেই যায়। 

নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ